মানত পূরন হলেই বুড়োর জন্য আনেন উপঢৌকন।
আজাদুর রহমানঃ
বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস যেখানে একই সুত্রে গাঁথা, সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে উভয় জাতি একসাথে সন্তষ্টথা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের কাতলাহার গ্রামের অদূরেই এই জায়গাটির অবস্থান। স্থানীয় লোকমুখে গল্পগাঁথা এই স্থানটি দেখতে আসে দূর দূরান্তের মানুষ। কাতলাহার ব্রীজের পাশেই বেশ প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল একটি বটগাছ। নিজস্ব ডালপালা ডানেবায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার অবস্থান। দেখতেই খানিকটা গা ছমছম করে উঠে।
স্থানীয়দের মতে, এই গাছে এক বুড়ো জ্বীন বসবাস করে। যার কাছে ভাল মনে যেকোন মানত করলে তা পূরন হয়ে যায়। অনেকের মানত বা ইচ্ছা নাকি পুরণও হয়েছে। হিন্দু কিংবা মুসলমান সবাই নাকি এইখানে এসে মানত করে। তাতেই দুই ধর্মের মানুষদের দারুণ মেলবন্ধনের বিষয়টি ফুটিয়ে তোলে।
বিশ্বাস আর অবিশ্বাস এর দোলাচলে এই নিয়ম চলে আসছে যুগের পর যুগ। এমনকি এইখানে কেউ অভদ্রতা করলে তাকে নাকি পস্তাতে হয় বেশ ভয়ানক ভাবেই। একটু অপেক্ষা করতেই চলে আসলো ২ জন মহিলা। একজন মুসলিম এবং অপরজন হিন্দু ধর্মের। তাদের বাড়ি এপাড়া-ওপাড়া এবং পরিচিত বলে তারা দুজনেই এসেছে বুড়োর দহে। ধর্ম আলাদা হলেও তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু এক। তা হলো মানত পুরণ হওয়ায় তারা বুড়োকে খুশি করতে নিয়ে এসেছে কিছু উপঢৌকন।
উপহারগুলোর মধ্য আছে গাভীর খাঁটি দুধ, সিঁদূর, আগরবাতি, বাতাসা, কলা, মোমবাতি এবং গোলাপজল। যে যার মত নিয়ম মেনে গাছের গোড়ায় সান বাধানো জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলো তাদের উপহারগুলো। এইভাবেই নাকি বিতরণ করতে হয়। তাতে বুড়োও নাকি খুশি হোন ! জানতে চাইলে তারা উত্তর দিলো তারা মানত বা ইচ্ছা পোষণ করেছিলো এইখানে। তাদের ইচ্ছা পুরণ হয়েছে তাই তারা খুশি হয়ে কিছু উপহার নিয়ে তা দান করতে এসেছে। কি কি মানত করেছিলেন জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, আমার গরুর বাছুর প্রসব করে মারা যেত তাই মানত করেছিলাম যদি বাছুর বাঁচে তাহলে গাই বাছুরের নতুন দুধ এইখানে উপহার হিসাবে দিবো। তাই দুধ নিয়ে আসছি।
অন্যজন হিন্দু হওয়ায় মুসলমানদের আসার ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে নারীটির ঝটপট উত্তর, ধর্ম আলাদা হলেও আমরা তো মানুষ তাইনা? ওনারা ইসলাম ধর্মের নিয়ম মতো মানত করে আর আমরা আমাদের ধর্মের নিয়মে মানত করে থাকি। এইখানে মনোমালিন্য বা ঝগড়াঝাটির কিছু নাই। কারণ সকাল হলেই আমাদের মুখ দেখাদেখি। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে সমাজে অশান্তি করে লাভ কি দাদা?